For Advertisement
750px X 80px Call : +8801911140321মানুষ বাঁচুক মানবিক মর্যাদায়: সেলিনা হোসেন

ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর, কারেন্ট নিউজ বিডি : সেলিনা হোসেন। গল্প-উপন্যাস ঘিরে কয়েক দশকের নিরলস পথ চলা তার। ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। করতেন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি। পরে রাজনীতিতে নিজেকে বেঁধে না রেখে লেখালেখিতেই মন দেন। ইতিহাসের সঙ্গে রাজনীতির নিবির সম্পর্ক থাকায়, তাঁর লেখালেখিতে রাজনীতির ছাপও পড়ে।
তার লেখালেখিতে উঠে এসেছে সমকালীন রাজনীতি, বিভিন্ন সামাজিক সংকট, বাঙালি ও দেশভাগ ও ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস, গণআন্দোলনের ইতিহাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় স্থান দখল করে আছে তার লেখনিতে।
For Advertisement
750px X 80pxCall : +8801911140321
তার বহু লেখা অনুদিত হয়ে গোটা বিশ্বের বই প্রেমিদের আনন্দ দিচ্ছে। দেশ-বিদেশে বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি।
লেখালেখি ছাড়া বর্তমানে শিশু একাডেমির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সেলিনা হোসেন। এর আগে পেশাগত জীবনে বাংলা একাডেমিতে গবেষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ১৪ জুন তিনি ৭২এ-পা দেন।
লেখালেখি, সমসাময়িক সমাজচিন্তা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি তার মুখোমুখি হয় একুশে টিভি অনলাইন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ রুবেল। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-
একুশে টিভি অনলাইন: একজন সাহিত্যিক হিসেবে সাহিত্য এবং রাজনীতি এ দুটি বিষয়কে কিভাবে দেখেন? বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সেলিনা হোসন: আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববদ্যালয়ে পড়ি। তখন থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতাম। আবার ওই সময়ই ছাত্র ইউনিয়ন দুই ভাগে ভাগ হয়ে ছিলো। এই রাজনীতির সূত্রে যখন আমি মার্ক্স এঙ্গেলের বই গুলো পড়ি এবং অর্থনৈতিক সূত্রটা পাই তখন আমার মনে হয়েছিল ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষ গুলোকে অন্ন বস্ত্র দেওয়া যাবে। ওই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের সামনে অনেক বড় দৃষ্টান্ত ছিলো সমতা সৃষ্টির বিষয়ে। তো মার্ক্স এঙ্গেল পড়েই রাজনীতিতে আসা।এবং পরবর্তীতে মনে হয়ে ছিল রাজনীতি দিয়ে যদি আমরা এগোতে পারি তাহলে গরীব জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা,স্বাস্থ্য, আশ্রয় সবকিছু পাবে। রাজনীতিকে এভাবেই দেখি। রাজনীতি শুধু একটি দলের ক্ষমতা যাওয়া নয়। সেই দলটির কাজ হবে সাধারণ মানুষকে প্রসারিত করা। যাতে করে সাধাণ মানুষ তার স্বাভাবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার সূত্রগুলো অবলম্বন করতে পারে। সেই সূত্রগুলো যেন পায়। যখন আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্রে কথা বলা ছিলো। তখন আমার মনে হয়েছিলো এটা রাজনীতির একটা বড় জায়গা। আমরা যদি এই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা সেটা করতে পারবো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই জায়গাটিকে ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে অনেক দিক থাকে, সেই সব দিকগুলো এক জায়গায় করে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও তিনি যে প্রচেষ্টা গুলো চালাচ্ছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য যে কাজগুলো করছেন, এগুলো রাজনীতির অনেক বড় একটি পরিসর তৈরী করতে পারে। এবং এই পরিসর বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
একুশে টিভি অনলাইন: এবার আপনার সাহিত্য প্রসঙ্গে আসা যাক। আপনি কয়েক দশক ধরে নিরলসভাবে লিখে যাচ্ছেন। আপনার লেখায় শৈশব, কৈশরের জীবন কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে।
সেলিনা হোসেন: শৈশব, কৈশরের ভূমিকা থেকেই আমি লেখার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। তাই আমি সব সময় বলি শৈশব, কৈশর সোনালী সময় ছিলো আমার জীবনে। পঞ্চাশ দশকের শুরুর দিকের কথা বা মধ্যভাগও বলা যায়, আব্বার চাকরির সূত্রে বগুড়ার করতোয়ার নদীর পাড়ের একটি এলাকায় ছিলেন। সেখানে আমাদের বাড়ি ছিলো। একটি কাঁচা বাড়ি, মাটির দেয়াল, উপরে খড়ের চাল ছিলো এবং সেই বাড়িতে ষোলটি ঘড় ছিলো। এভাবে শৈশবে নানা কিছুর দেখার, প্রকৃতিকে দেখা, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক দেখা এবং এই মানুষের অনুভবটি নিজের মধ্যে ধারণ করার বিষয়টি আমার মধ্যে ব্যাপকভাবে তখন গেঁথে গিয়েছিলো। আমি সেই জায়গাটি ধারণ করে আমার লেখালেখির উপকরণ খুজে নিয়েছিলাম।
একুশে টিভি অনলাইন: আপনার লেখায় আমরা সব সময় বিপন্ন মানুষের জীবনচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। রোহিঙ্গা সংকট লিখায় হাত দিয়েছিলেন। আর কত দিন পর উপন্যাসটি আলোর মুখ দেখবে?
সেলিনা হোসেন: হ্যাঁ, রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটা উপন্যাস লেখার ইচ্ছেটা তৈরি হয়ে ছিলো ১৯৯৬ সালে। ওইসময় আমার রচিত পোকা মাকড়ের ঘড় বসতির চলচিত্রের স্যুটিং দেখতে গিয়েছিলাম টেকনাফে। সেই স্যুটিং দেখার ফাঁকে টেকনাফেরের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছিলাম তাদের জীবন দেখতে। কারণ তখন আমি জানতাম রোহিঙ্গাদের নৃ-তাত্তিক নির্যাতনের জায়গা থেকে তাদের সড়ে আসতে হচ্ছে এবং নানা কিছু। তাদের ওই জীবন চিত্র দেখে তখন আমার মনে হয়েছিলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি উপন্যাস লিখা যায়। তারপর এ বিষয়ে গবেষণার জন্য নানা তথ্য উপাত্ত-উপাদান সংগ্রহ করি। তারপর উপন্যাসটি লিখতে সময় লাগছিলো। পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গাদের যে পট পরিবর্তনের নানা দিকগুলো রাজনৈতিক ভাবে পাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো উপন্যাসে এ জায়গাগুলো না এনে উপন্যাসটি লিখলে অনেক অংশ হয়তো মিসিং থাকবে। সেই জায়টা মিসিং থাকা উচিৎ হবে না। সেজন্য কাজ করবো করবো,করার পরও কাজটি করে উঠতে পারিনি। কারণ আমার গবেষণার কাজ সম্পূর্ণ নয় বলে। এখন রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছে, এ বিষয়টিকে এত সহজভাবে গ্রহণ করা, উপন্যাসে তুলে আনা কঠিন কাজ। তাই আমার পরিকল্পনাটি স্থগিত রেখেছি।
একুশেটিভি অনলাইন: রোহিঙ্গা সংকটকে কিভাবে দেখছেন?
সেলিনা হোসেন: হ্যাঁ,আগামী ৫০ বছর পর রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, বাংলাদেশে আসা দশ লাখ রহিঙ্গার ভবিষ্যৎ কী হবে, ওরা তো ধীরে ধীরে মিশে যাবে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে। তখন গভীর সংকট তৈরী হবে। আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে মিয়ানমার ওদের নির্যাতন করে আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় বিপন্ন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে ওদের আশ্রয় দিলে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তাই এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
সংগৃহিত
For Advertisement
750px X 80px Call : +8801911140321কারেন্ট নিউজ বিডি'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মতামত: